ছাত্রলীগে অসন্তোষ চরমে, যেকোনো মুহুর্তে জয়-লেখকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ!

- ১০-মার্চ-২০২০ ০৯:৫০ পূর্বাহ্ণ
:: উৎপল দাস ::
অনেক স্বপ্ন নিয়ে আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টচার্যের হাতে ছাত্রলীগের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন সংগঠনের সর্বোচ্চ অভিভাবক শেখ হাসিনা। গত ৪ জানুয়ারি তাদের ভারপ্রাপ্ত থেকে মুক্তি দিয়ে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দেয়া হয়। কিন্তু এরপর থেকে এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো সাংগঠনিক কর্মদক্ষতা দেখাতে না পারায় খোদ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যেই চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। যেকোনো মুহুর্তে এই অসন্তোষ ক্ষোভে পরিণত হয়ে বিক্ষোভের রূপ ধারণ করতে পারে বলে নিশ্চিত করেছেন ছাত্রলীগেরই একাধিক প্রভাবশালী নেতা।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দায়িত্ব প্রাপ্তির পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আরো ঝিমিয়ে পড়েছে। সাংগঠনিক তেমন কোনো গতিশীলতা না থাকায় সংগঠনের মধ্যে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। দুই মাসের বেশি সময় ধরে কোনো বর্ধিত সভা থেকে শুরু করে কোনো সাংগঠনিক সফরও করতে পারেননি জয়-লেখকের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ। এমনকি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং গোলাম রাব্বানীর সময়ে হয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ৪ টি ইউনিটের সম্মেলন হলেও সেখানে নতুন নেতৃত্ব দিতে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছেন তারা।
একই সঙ্গে ছাত্রলীগ থেকে বির্তকিতদের বাদ দেয়ার পর যোগ্যদের পদায়নের কথা থাকলেও সেটিও জয়-লেখক এখনো পর্যন্ত করতে পারেননি। এ নিয়ে বিদ্রোহীদের মধ্যেও রয়েছে প্রচণ্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা যেকোনো মুহুর্তে আবারো আন্দোলনে নামতে পারে জয়-লেখকের বিরুদ্ধে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্য থেকে সবচে গুরুতর অভিযোগ যেটি উঠেছে সেটি হচ্ছে, জয়-লেখকও কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব বন্টন করে দিচ্ছেন না অজ্ঞাত কারণে। তারা শুধুমাত্র নিজেদের সিদ্ধান্তেই ছাত্রলীগ পরিচালনা করছেন নিজেদের মতো করে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে কেন্দ্রীয় কমিটির সবার সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা।
এ পর্যন্ত জয়-লেখক কোনো জেলাতেই সম্মেলন করে কমিটি দিতে পারেননি। এটাও তৃণমূলের কাছে তাদের সাংগঠনিক ব্যর্থটারই পরিচয় দিচ্ছে। এমনকি ১০ বছরের পুরোনো কমিটি না ভেঙে তারা আড়াই বছরের কমিটি ভেঙে দিয়েছেন। এরপর আল নাহিয়ান খান জয় নিজেই বলেছিলেন, ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে কোনো আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠলে তিনি ব্যবস্থা নিবেন। কিন্তু সর্বশেষ জয়-লেখকের স্বাক্ষরিত সর্বশেষ চট্টগ্রাম জেলা দক্ষিণ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ খোদ আল নাহিয়ান খান জয়ের বিরুদ্ধেই উঠেছে।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখার সম্মেলন এখনো আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টাচার্য দিতে পারছেন না। যদিও ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যেকোনো মহুর্তেই হল কমিটির সম্মেলন করতে প্রস্তুত রয়েছেন। এ নিয়েও ছাত্রলীগের ঢাবি নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অব্যাহতি পাওয়া নেতারাও মুখিয়ে আছেন জয় লেখকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে অংশ নিতে। তারা বলেছেন, আমাদের কি অপরাধে প্রাণের সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো তা পরিষ্কার করেনি জয় লেখক। সাংগঠনিকভাবে তারা এটা করতে পারেন না। আমি অপরাধী হলে আমাকে শোকজ করে জানাতে হবে। এরপর আমি জবাব দিবো। তারপর অপরাধী হলে আমাকে বহিষ্কার করা হতে পারে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানতেই পারি নাই, কি অপরাধে আমাদের ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এমনকি, ছাত্রলীগের এ কমিটিতে অনেকেই বিবাহিত, মাদকব্যবসায়ী ও বয়োসোর্ত্তীণ রয়েছে। তাদের বিষয়ে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না, সেটিও জয়-লেখক পরিষ্কার করছে না। আমরা বিষয়গুলো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জানিয়েছি। আগামী দুই দিনের মধ্যে সমাধান না হলে আমরা আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল নেত্রীর (শেখ হাসিনা) কাছে যাবো এবং সংবাদ সম্মেলন করবো।
এসব বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টচার্যকে ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।