‘মুজিববর্ষ’: প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়াক মুজিব আর্দশ

  • ১৫-মার্চ-২০২০ ০৪:৫৭ অপরাহ্ন
Ads

:: ড. কাজী এরতেজা হাসান ::

‘যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা গঙ্গা গৌরি বহমান/ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’ আগামীকাল মঙ্গলবার জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মদিন। এই মহান নেতার স্মৃতিকে জাগরিত রাখতে সুচিত হবে বছরব্যাপী মুজিববর্ষের কার্যক্রম। দিনটি এমন একজন নেতার যার ত্যাগ, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, বিশ্বাস সবই কিংবদন্তিতুল্য। দেশপ্রেম আর মানুষের প্রতি ভালোবাসায় যা নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষনীয়। বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া আর্দশ আজ প্রতিটি নতুন প্রজন্মকে ধারণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর মতো দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতে হবে নতুন প্রজন্মের মধ্যে। তাহলে দেশ আগামীতে আরো এগিয়ে যাবে। 

দেশকে বিশ্বের বুকে গৌরবের মিনার হিসেবে প্রতিষ্ঠাই করা ছিল জাতির জনকের স্বপ্ন। নতুন প্রজন্ম জাতির জনকের সেই স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে, আগামীর পথে পা ফেলবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। সেই প্রত্যাশাকে পূরণ করতে কবির ভাষায় বলতে হয়, ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।’ বঙ্গবন্ধু নিজের জীবন দিয়েই আমাদের সেই শিক্ষা দিয়েছেন। কোন অন্যায় অবিচারের কাছে মাথা নত নয়। অসত্য অন্যায়ের কাছে নত নাহি হবে শির/ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর। বীরত্বের এই সংজ্ঞা তার চেয়ে আর কার মানায়? 

বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধন করার কথা রয়েছে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানের। পূর্বনির্ধারিত ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ অতিথিরা মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। কিন্তু প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের কারণে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে এবং বিদেশি অতিথিরা অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন না। সম্মানিত এসব বিদেশি মেহমানরা নিজের দেশে নভেল করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ভীষণ ব্যস্ত থাকায় তারা আসতে পারছেন না। গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। 

এটা ঠিক যে প্রথমে আকস্মিকভাবে চীনে করোনা আঘাত হানে, তা এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। সারা বিশ্বে তার ভয়াল থাবায় জনজীবন বিপন্ন। অনেক দেশই এখন আক্রান্ত। কয়েকটি দেশ নিজেদের জনগণকে রক্ষায় স্টেট ইর্মারজেন্সি জারি করতে বাধ্য হয়েছে। আক্রান্ত অধিকাংশ দেশ এটিকে জাতীয় দুর্যোগ ও  মানবিক বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিপদের ভয়াবহতা আঁচ করেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতশীল হওয়ায় এই ব্যবস্থা না নিয়ে উপায় ছিল না বলে বিশ্ব মিডিয়ার খবরে জানা যাচ্ছে। 

যাই হোক। বাংলাদেশ কোরোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার প্রাণান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষকে সুরক্ষাদানে সরকার সব রকমের ব্যবস্থা নিয়েছে। করোনার কারণে আমাদের দেশের মানুষের মনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। দেশের মানুষ একটি আতঙ্কের মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন। তবে এই সংকটের জন্য প্রচার-প্রচারণা মানুষকে বেশি আতঙ্কিত করে তুলেছে। আমরা প্রতিনিয়ত কেবলই আক্রান্ত হওয়ার খবর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু অনেকেই যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন সে খবরটির দেখা মিলছে না। আর মিললেও বড় ছোট্ট আকারে তার পরিবেশনা। সংবাদপত্রের ভাষায় এটাকে ব্লাক আউট বলে। জনগণের ভেতর থেকে ভীতি তাড়াতে হলে আক্রান্তের পাশপাশি সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরছেন এমন সংবাদও ছাপা হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। বিশিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, এই রোগে মৃতের সংখ্যা মাত্র দুই শতাংশ। কিন্তু সেটিকেই বড় করে দেখানোর ফলে মানুষের মনে একধরনের ভয় ঢুকে যাচ্ছে। যা কোনভাবেই কাঙ্খিত নয়। ভীতির মাঝেই মুজিববর্ষের কর্মসূচি পালন করা হবে, তার জন্য দেশের বেশিরভাগ মানুষ এই কর্মসূচিতে উপস্থিতি হতে পারবে না। কোটি কোটি মানুষের প্রিয় নেতার জন্মদিনে তারা হাজির থাকতে পারবেন না। করোনা তাদের সেই সুযোগ কেড়ে নিয়েছে। এই পরিস্থিতির উদ্ভব না হলে এবং এর দ্বারা সারা বিশ্বে কাঁপন না ধরালে আশা করা যায়, মুজিববর্ষ অনুষ্ঠান বিশাল পরিসরেই উদ্যাপন করা সুযোগ থাকত। করোনায় সেই কাক্সিক্ষত ব্যাপক জমায়েতের সুযোগ হলো না। বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যেই বলেছেন, ভিন্নভাবে অনুষ্ঠান করা হবে। 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্থপতি। তিনি আমাদের একটি লাল-সুবজের পাতাকা দিয়েছেন। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র দিয়েছেন। তাকে নিয়ে যে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়- তা গোটা দেশের মানুষের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন। স্বল্প পরিসরে হলেও নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে নতুনভাবে জানার সুযোগ পাচ্ছে মুজিবর্ষের মাধ্যমে। মুজিববর্ষের কার্যক্রম চালানোর ক্ষেত্রে করোনা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না। তারপরেও বলতে হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতেই মুজিববর্ষের কার্যক্রম এবং অনুষ্ঠানকে যতোটা সম্ভব প্রাণবন্ত করে তুলতে হবে।

এবারে ইতিহাসের পাতা উল্টানো যাক। এ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা অনেকদিন কুক্ষিগত করে রেখেছিল একাত্তরের পরাজিত শক্তি রাজাকার আলবদরসহ স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্র। রুদ্র তাই লিখেছিলেন ‘জাতির পতাকা খামচে ধরেছে একাত্তরের শকুন’। এর মূল হোতা ছিলেন খুনি জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে তার পতœী বেগম জিয়া। পরাম্পরায় এরা জাতির জনকের নাম-নিশানা মুছে ফেলার যাবতীয় চেষ্টা করে গেছে। জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বানিয়ে তাকে জাতির জনকের পাশাপাশি স্থান দেওয়ার অপচেষ্টা ও দুরভিসন্ধি চালানো হয়েছে, যা দেখে স্বাধীনতার সত্য ইতিহাসের সাক্ষী  দেশের মানুষ ভীষণ মর্মপীড়ায় ভুগেছেন। স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন করার মিশন নিয়ে তারা স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। এসময় খুনি জিয়া এবং তার পতœী খালেদা ঘাতকদের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসিয়েছে। স্বামী জিয়া গোলাম আযমের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে আর কুখ্যাত জামায়াত নেতাদের মন্ত্রী বানায় বেগম জিয়া। এই অপকর্ম করে গর্বের হাসি হেসেছে বিএনপি নেত্রী। জিয়াপতœী বঙ্গবন্ধুকে অপমানিত করতে তার শাহাদতের দিনটিকে নিজের মিথ্যা জন্ম দিন বানিয়ে আনন্দ উৎসব করেছে। এভাবে জাতির জনকের সব অবদানকে অস্বীকারের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। তা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর ঘাতকদের তৈরি মিথ্যাকে সরিয়ে সত্য ইতিহাস প্রকাশ করলে জাতির জনক সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম প্রকৃত সত্যটা জানতে পারে। কথায় আছে একই ফুল মৌমাছি সেখান থেকে মধু নেয় আর মাকড়সা নেয় বিষ। মুজিববর্ষ এই জানার সুযোগ কেবল বাড়িয়েই দেয়নি তাকে বেগবান করেছে।  

পরিশেষে আমরা বলতে চাই, দিন যতই গড়াবে জাতির জনকের অবদান দেশের মানুষের কাছে আরো বিস্ময় হয়ে ধরা দেবে। বর্তমান প্রজন্ম এবং আগামী প্রতিটি প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর প্রতি আরো শ্রদ্ধাশীল হয়ে গর্ব অনুভব করবে।  সত্য কখনো চাপা থাকেনা তাই মাক্সিম গোর্কি লিখিছিলেন, সুর্যের আলো হাত দিয়ে কভু ঠেকাতে পারে কি কেউ/আমাদের মেরে যাবে না ঠেকানো গণজোয়ারের ঢেউ। তাই বঙ্গবন্ধুকে মেরে তার আদর্শ ঠেকানো যায়নি। জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়েও মৃত বঙ্গবন্ধু  আজ অনেক, অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে বাংলার আকাশে ধ্রুবতারার মত জ্বলছেন। মুজিববর্ষ সফল হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। 

Ads
Ads