‘সংযত’ মুদ্রানীতি ঘোষণা

  • ৩০-Jul-২০১৮ ০৬:০০ অপরাহ্ন
Ads

কালাম আজাদ
নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘সংযত’ ভঙ্গির মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো হারেই বাড়ানো হয়েছে। তবে কমানো হয়েছে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, সরকারি খাতে ঋণ কম গেলে, বেসরকারি খাত এমনিতেই সুযোগ পাবে। অপরদিকে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে রিজার্ভে টান পড়ার পরও তা বাড়ানোর প্রক্ষেপণ করা হয়েছে মুদ্রানীতিতে। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে ভোজ্যতেলের দাম কিছুটা বেশি। তাছাড়া আসছে দিনে বড় প্রকল্পগুলোর জন্যও আমদানি ব্যয় বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। সবমিলে মূল্যস্ফীতি ‘কমানোর’ কথা বললেও জুলাই থেকে ডিসেম্বর নাগাদ তুলনামূলক এক শতাংশ বেশি (১০ দশমিক ২ শতাংশ) ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধির কথা বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে একই সময়ে ৮ শতাংশ রিজার্ভ প্রবৃদ্ধির কথাও বলা হয়েছে। তবে আগামী বছরের জুন নাগাদ রিজার্ভ প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ধরলেও ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে রিজার্ভ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ শতাংশ আর ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১২ শতাংশে। উল্লেখ করা যেতে পারে, রিজার্ভ বাড়ানোর প্রেক্ষিতে বাজার (ব্যাংক) থেকে বৈদেশিক মুদ্রা কিনে নিলে সম-পরিমাণ টাকা ছাড়তে হয়। এতে মূল্যস্ফীতি উস্কে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধ) মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির জানান, আগেকার ধারাবাহিকতায় প্রবৃদ্ধিবান্ধব ও মূল্যস্ফীতি পরিমিত রাখার লক্ষ্যে মুদ্রানীতিভঙ্গী সংযত ধরনেরই থাকবে। উচ্চতর প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যাংকিং খাত থেকে অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি পূর্ববর্তী বছরের ১৪ দশমিক ৬ শতাংশের বিপরীতে ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ ধরা হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি ঋণে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ (গেল জুন শেষে প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ২ দশমিক ৫ শতাংশ থাকায়, আগামী ডিসেম্বর শেষে সরকারি খাতের ঋণে আসলে-একচুয়াল প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১১ দশমিক ১ শতাংশ)। আর বেসরকারি খাতে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। গেল জুন শেষে যার প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৭ শতাংশ। অপরদিকে আগামী জুন শেষেও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৮ শতাংশই রাখতে চাইছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 
মুদ্রানীতির ঘোষণাপত্রে (মনিটারি পলিসি স্টেটমেন্ট জুলাই-ডিসেম্বর ২০১৮) বলা হয়েছে, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধি হবে ১০ দশমিক ২ শতাংশ। গেল জুনে যা ধরা হয়েছিল ৯ দশমিক ২ শতাংশ। একইসঙ্গে আগামী জুন নাগাদ ব্যাপক মুদ্রায় ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রাখতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। অপরদিকে সম্প্রতি আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভে বেশ টান পড়েছে। এক্ষেত্রে গত বছর জুন শেষে রিজার্ভে প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ হলেও গেল জুন শেষে এর প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ শতাংশে। ওই প্রবৃদ্ধির হারকে দ্বিগুণ করে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ ৮ শতাংশে স্থির করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অপরদিকে নানা কারণে আগামী বছর জুন নাগাদ রিজার্ভ প্রবৃদ্ধি কম হবে বলেই মনে করছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এক্ষেত্রে তা ৭ শতাংশে স্থির করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু ছয়মাস অন্তর মুদ্রানীতি ঘোষণা করে, তাই পরের ছয়মাসের নানা বিষয়ের প্রক্ষেপণ পরিবর্তিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে (লেনদেনে ভারসাম্য) ভিন্নতা দেখা দিলে নানা প্রক্ষেপণও পরিবর্তিত হয়। এ ধরনের অবস্থায় আমদানি ব্যয় বেড়ে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক যদি মনে করে দেশীয় কম অর্থ খরচ করবে, সেক্ষেত্রে ডলারের বিপরীতে টাকার মান বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ এক ডলারে আগের চেয়ে কম বাংলাদেশি মুদ্রা পাওয়া যায়। সে সময় ক্ষতির মুখে পড়েন রফতানিকারকরা। একইসঙ্গে রেমিটাররাও তখন ক্ষতিতে পড়েন। কারণ একজন রফতানিকারক ও রেমিটার তখন বৈদেশিক মুদ্রার বদলে বাংলাদেশি কম মুদ্রা পান। 
গভর্নর মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে গিয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম সমর্থন হিসেবেই আখ্যায়িত করেন। একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার যে প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল, তা গেল জুন শেষে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশে উঠে যাওয়ায়, তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গভর্নর তার বক্তব্যে গেল ১৫ এপ্রিল থেকে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বাধ্যতামূলক বিধিবদ্ধ জমার অনুপাত বা সিআরআর এক শতাংশ কমিয়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তহবিল আহরণের রেপো সুদহার দশমিক ৭৫ শতাংশ কমিয়ে ৬ শতাংশে আনার কথাও উল্লেখ করেন।

Ads
Ads