চলমান আন্দোলন বিনিয়োগ, মূল্যস্ফীতি ও ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে: এফবিসিসিআই

- ৪-Aug-২০১৮ ০৬:০০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিরাপদ সড়কের দাবিতে থাকা চলমান আন্দোলন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সংগঠনটি বলছে, ‘এ ধরণের আন্দোলন বিনিয়োগ সম্ভাবনা, নিত্য পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা তৈরি হওয়া, সর্বোপরি দেশের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
রোববার বিকেলে মতিঝিলের চেম্বার ভবনে নিরাপদ সড়কের দাবিতে থাকা ছাত্র আন্দোলন ও পরিবহন ধর্মঘটের ফলে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এফবিসিসিআই। এতে লিখিত বক্তব্য পড়েন সংগঠনের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে ছাত্র আন্দোলন এবং এ থেকে উদ্ভুত পরিবহন ধর্মঘটের কারণে দেশের জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক বিবেচনায় যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমরা ব্যবসায়ী সমাজ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও পরিবহনকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কোনো আন্দোলনকে সমর্থন করিনি এবং আগামীতে করবো না। বিশেষ করে এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দূরপাল্লার যানবাহন ভাঙচুর এবং আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যে সহিংসতা ঘটেছে তা কোন ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আমরা চাই দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করুক। প্রত্যেক নাগরিক স্বাভাবিক জীবনযাপন করুক।’
তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলন ও পরিবহন ধর্মঘটের ফলে যান চলাচল বন্ধ থাকার কারণে সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় মূল্যস্ফীতির হার আবারও বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাগণ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রামসহ সকল বন্দরে আমদানি রফতানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের ব্যবসাবাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। আর এ ধরণের স্থবিরতা দীর্ঘমেয়াদী হলে তা দেশের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ফলে এ ধরণের আন্দোলন কোনভাবেই কাম্য নয়।
এরইমধ্যে অনেক বিদেশি বাংলাদেশে তাদের ভ্রমণ বাতিল করেছে। ব্যবসা বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় আগামী কোরবানি ঈদে অনেকের বেতন-বোনাস দেয়া কষ্টকর হবে বলেও শংকিত এফবিসিসিআই সভাপতি।
আন্দোলনে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ জানতে চেয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের উত্তরে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এ ধরণের আন্দোলনে দুই ধরণের ক্ষতি হয়। আর্থিক ও সুনামের ক্ষতি। তাজরিনের জন্য সুনামের যে ক্ষতি হয়েছিল, বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেও সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি। সাধারণত হরতালে প্রতিদিন ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ ধরণের আন্দোলনে তো কিছু যানবাহন চলেছে, আবার কিছু চলেনি। সংগঠনের পক্ষে এখনও ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা হয়নি।
স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে পরিবহন খাতের নেতাদের সঙ্গে বসতে পারেন বলেও জানিয়েছেন শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা মনে করি ফিটনেস বিহীন গাড়ি দেশে থাকা উচিৎ নয়। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআইয়ে শীর্ষ এই নেতা বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন ও কনসার্ন। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন সবার মনে দাগ কেটেছে। সরকারও দাবি মেনে নিয়েছে। কিন্তু এ ধরণের আন্দোলন যদি দীর্ঘমেয়াদী হয়, তখন এতে স্বার্থান্বেষী মহল ঢুকবেই। শফিউল আরও বলেন, একটি মহল এখন ভুয়া খবর ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তাই সকলের প্রতি আহ্বান থাকবে আমরা যেন এ ধরণের ফেক নিউজে বিভ্রান্ত না হই।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, সহ-সভাপতি জনাব মো: মুনতাকিম আশরাফ এবং পরিচালকদের মধ্যে ড. কাজী এরতেজা হাসান, প্রবীর কুমার সাহা, তাবারুকুল তোদাদ্দেক হোসেন খান টিটু প্রমুখ।