বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পরিচালনায় জুবিলী ব্যাংকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক!

  • ৪-Sep-২০১৮ ০৬:০০ অপরাহ্ন
Ads

:: ভোরের পাতা ডেস্ক ::

দেশের বেসরকারি খাতের পুরোনো জুবিলী ব্যাংকে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের শেয়ার থাকাসহ বিভিন্ন কারণে জটিলতা থাকায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে এক নির্বাহী পরিচালককে (ইডি) নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

শতবর্ষী এ ব্যাংকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত তিন খুনি-কর্নেল (অব) ফারুক, কর্নেল (অব) আবদুর রশিদ ও মেজর (অব) বজলুল হুদার শেয়ার রয়েছে। তাদের শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা আরোপে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সংক্রান্ত অফিস আদেশে বলা হয়েছে, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে সিলেট অফিসে কর্মরত (ইডি) মো. শাহ আলমকে জুবিলী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে। দায়িত্ব পালনের স্বার্থে তাকে সিলেট থেকে ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে বদলি করা হলো।

আগামী ৬ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকায় যোগদান করবেন। এ ব্যাপারে মো. শাহ আলম বলেন, শুনেছি আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক আমাকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। অফিসিয়াল অর্ডার দেখেছি। এর বেশি কিছু জানি না।

এ নিয়োগের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছি।

উল্লেখ্য, দেশে ৫৮টি তফসিলি ব্যাংক ও ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ৫টি অতফসিলি ব্যাংক রয়েছে। জুবিলী ব্যাংক একটি অতফসিলি ব্যাংক।

সূত্র জানায়, দেশের পুরাতন ব্যাংক হলেও এটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। অনেক দিন ধরে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয় না। সার্বিক কর্মকান্ডের কোনো হিসাব-নিকাশ ও জবাবদিহিতা নেই। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর তিন খুনির শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়াও চলমান। এ বিষয়গুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান নিয়োগ দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আদালতের ওই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি)।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরপিডি বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বেশ কয়েক বছর জুবিলী ব্যাংকের এজিএম হয়নি। কারা এর চেয়ারম্যান, শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালক তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই। শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালকদের তথ্য সংগ্রহ করে এগুলো জানাতে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। প্রয়োজনে পর্যবেক্ষক নিয়োগের কথাও কোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে। আপাতত চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওই চেয়ারম্যান আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে আদালতকে জানাবেন।

জুবিলী ব্যাংক ১৯১৩ সালের ১৫ এপ্রিল ‘খোকসা জানিপুর জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড’ নামে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধ বা আরজেএসসিতে নিবন্ধিত হয়। নিবন্ধন নম্বর সি-২৩৭৩। ১৯৮৭ সালের ২৬ জানুয়ারি নাম পরিবর্তন করে ‘জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড’ নামে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে।

ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে যখন লাইসেন্স নেয়, তখন মিয়া আবদুর রশীদ নামে এক ব্যক্তি এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে সময় তার হাতে ব্যাংকের শেয়ার ছিল ৫১ শতাংশ। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনিই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে ব্যারিস্টার এমবিআই মুন্সী ২০০২ সালে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন। ২০০৮ সালে তিনি আবারও ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন। তবে কে চেয়ারম্যান এ নিয়ে আদালতে মামলা পাল্টামামলা রয়েছে, যা বিচারাধীন।

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত তিন খুনি জুবিলী ব্যাংকের মালিকানায় ছিলেন। কর্নেল (অব) ফারুক ও কর্নেল (অব) আবদুর রশিদের নামে ৮৫ হাজার শেয়ার রয়েছে। এগুলো হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আরজেএসসি। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি মেজর (অব) বজলুল হুদা দুই বছর ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন। তাদের শেয়ার রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। কোম্পানি আইনে শুধু আত্মস্বীকৃত দুই খুনির শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আরজেএসসি। এর বাইরে বাজেয়াপ্ত করার আইনি সুযোগ নেই। ফলে দুই খুনির শেয়ার বাজেয়াপ্ত করতে নতুন আইন প্রণয়নের কাজ চলছে।

জানা গেছে, ২০১২ সালে এজিএম করা নিয়ে ব্যাংকটির পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ হাইকোর্টে একটি মামলা করেন। এজিএমসংক্রান্ত মামলার আদেশে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের জন্য তিন সদস্যের প্যানেল করে তাদের আবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করতে নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু তা না করে সরাসরি এমডি নিয়োগ দেওয়ায় গত বছরের নভেম্বরে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়। শুনানি শেষে আদালত অবমাননার দায়ে তারা সাজা পান।

সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে তৎকালীন চেয়ারম্যান এমবিআই মুন্সী ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামানকে একদিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একজন সদস্য অনুপস্থিত থাকায় তাকেও একদিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া ব্যাংকের চার পরিচালককে কিছু সময় আদালত কক্ষে দাঁড়িয়ে থাকার দণ্ড দেওয়া হয়।

Ads
Ads