বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে প্রধানমন্ত্রীর তিরষ্কার, বিকল্প খুঁজছে সরকার

  • ১৭-Sep-২০১৮ ০৬:০০ অপরাহ্ন
Ads

:: নিজস্ব প্রতিবেদক ::

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত “বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস” নামক বইয়ের কোথাও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি স্থান পায়নি। অথচ বইটিতে পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের মোট চারটি ছবি ছাপা হয়েছে।

মোট ৩৪৩ পৃষ্টার বইয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা ও তিন বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ছবি থাকলেও তা বেশ অস্পষ্ট এবং ছোট। তবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে বইটি বিতরণ এরই মধ্যে বন্ধ রাখা হয়েছে। আর তা সংশোধন ও সংযোজন করতে বাংলাদেশের ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামানকে প্রধান করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি রিভিউ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে, এই ডেপুটি গভর্নর মনিরুজ্জামান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিবিরের সক্রিয় নেতা ছিলেন।

এমন খবর ভোরের পাতা সহ আরও একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে ডেকে তিরস্কার করেছেন। সোমবার  বিকালে প্রধানমন্ত্রী তাকে এমন হীন কাজের জন্য তিরস্কারের পাশাপাশি দোষীদের শাস্তির নির্দেশ দেন।

এর আগে বইটি নিয়ে সমালোচনা হলে তদন্ত কমিটি করে রিভিউ' র মাধ্যমে  বাংলাদেশে ব্যাংকের ইতিহাস বইটিতে বঙ্গবন্ধুর অবদানের পাশাপাশি তার বিভিন্ন ছবি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন সংযোজন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বই প্রকাশ না করার নির্দেশ দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, “বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস”নামের এই বইটি দুইটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্বে (১-৩৪২) পৃষ্ঠায় রাখা হয়েছে, বিভিন্ন প্রবন্ধ, নিবন্ধ, স্মৃতিচারণা ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ইতিহাস সংক্রান্ত বিষয়। বইটির দ্বিতীয় পর্ব (৩৪৩-৩৬১) রাখা হয়েছে ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন ইতিহাস ঐতিহ্য এবং বিভিন্ন সময়ে সভা, সেমিনার, টেনিং প্রোগ্রাম এবং উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন সংক্রান্ত বিভিন্ন ছবি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও এত বড় এই বইটিতে জাতির জনক হিসেবেও তার কোন ছবির ঠাঁই হয়নি। অথচ দুই পর্বের বইটিতে আইয়ুব খানের তিনটি এবং মোনায়েম খানের একটি গ্রুপ ছবি বেশ গুরুত্বের সাথেই তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে বইটির প্রকাশনার সময় উল্লেখ করা হলেও বইটি ছাপা হয়েছে তারও অনেক পড়ে। মূল বইয়ের ৩৪৩ পৃষ্ঠায় আইযুব খানের দুইটি ছবি ছাপা হয়েছে। প্রথম ছবিটির নীচে ক্যাপশন দেয়া হয়েছে, “স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঢাকার মতিঝিলস্থ প্রধান ভবনের পরিদর্শন বহিতে স্বাক্ষর করেছেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আইয়ুব খান (১০ ডিসেম্ভর ১৯৬৮)।” ছবিটিতে দেখা যায় আইয়ুব খান বসে স্বাক্ষর করছেন, আর তার পিছনে সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তারা দাড়িয়ে আছেন।

একই পৃষ্ঠায় দাঁড়ানো অবস্থায় আইয়ুব খানের আরেকটি ছবি রয়েছে। যেখানে ছবিতে আইয়ুব খানের পিছনে কয়েকজন বেসামরিক লোক দাঁড়িয়ে আছেন। এই ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে “ পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আইয়ুব খান ও স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান, ঢাকার প্রধান ভবনের  কর্মকর্তারা (সন ১৯৬৮)।

এছাড়া বইটির ৮২তম পৃষ্ঠায় আইয়ুব খানের ব্যাংক উদ্বোধনের আরেকটি ছবি রয়েছে। ছবিতে দেখানো হয়েছে, আইয়ুব খান চাবি দিয়ে তালা খুলছেন। ছবির নীচে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, “পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আইয়ুব খান ১০ ডিসেম্বর ১৯৬৮ তারিখে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান, ঢাকার নতুন ভবন উদ্বোধন করেন।”

এছাড়াও বইটির ৮৩ পৃষ্ঠায় স্থান পেয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর মোনায়েম খান টুপি পরিহিত অবস্থায় মঞ্চে বসে আসেন এমন একটি ছবি। এই ছবির ক্যাপশনে লিখা হয়েছে- “স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ডিজি অফিস ভবনের (বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের প্রধান ভবন) উদ্বোধন অনুষ্ঠান (১০.১২.১৯৬৮)” প্রত্যেকটি ছবি আর্ট পেপারে মুদ্রিত।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে ৮৪তম পৃষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অস্পষ্ট ও অপেক্ষাকৃত ছোট একটি ছবি স্থান পেয়েছে। ১৯৯৬ সালে প্রথম মেয়াদে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩০ তলা ভবনের উদ্বোধন ছবি এটি। ছবির নীচে ক্যাপশন লিখা হয়েছে, “বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের দ্বিতীয় সংলগ্নী ভবনের উদ্বোধন” । কে উদ্বোধন করছেন তার নামটিও লেখা হয়নি। 

এদিকে, বঙ্গবন্ধুকে অবমূল্যায়ন করা বইয়ের মুখবন্ধে গভর্নর কিভাবে স্বাক্ষর করেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী মহল। তিনি আদর্শিকভাবে কোন দলের হয়ে কাজ করছেন তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দুইজন কর্মকর্তার কারণে তিনি সোনারর কেলেঙ্কারি, ঢাকা ব্যাংকের নানা অনিয়মের পরও বহাল তবিয়তে গভর্নরের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

Ads
Ads