ফের ইউনিয়ন ব্যাংকের উপদেষ্টা হতে তোড়জোড় বিতর্কিত আমিনুর রহমানের

- ২০-জানুয়ারী-২০১৯ ০৩:০৬ অপরাহ্ন
আবারও ইউনিয়ন ব্যাংকের উপদেষ্টা হতে তোড়জোড় শুরু করেছেন এস এম আমিনুর রহমান। যিনি ছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক ডুবানোর নায়ক। প্রায় তিন মাস আগে ইউনিয়ন ব্যাংকের উপদেষ্টা পদের মেয়াদ শেষ হয়েছে তার। চাকরি না থাকলেও ব্যাংকটিতে নিয়মিত অফিস করে আসছিলেন তিনি। এবার আবারও ইউনিয়ন ব্যাংকে উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে আমিনুর রহমান লবিং শুরু করেছেন। যদিও কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে নতুন করে উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেওয়ার বিরোধী নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে নানা মাধ্যমে তদবির করে তিনি উপদেষ্টা পদ বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, চাকরি না থাকলেও গত তিন মাস ধরে আমিনুর রহমান ইউনিয়ন ব্যাংকে নিয়মিত অফিস করে আসছিলেন। ব্যাংকটির নীতিনির্ধারণী সকল কাজে হস্তক্ষেপ করছিলেন তিনি। বড় ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে তার তদবিরে অতিষ্ঠ ব্যাংকটির কর্মকর্তারা। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের রহস্যময় ভূমিকার কারণে আমিনুর রহমান বহাল তবিয়তে আছেন।
চাকরি না থাকলেও ইউনিয়ন ব্যাংকে এস এম আমিনুর রহমানের অফিস করা নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। জনতা ব্যাংকে নজিরবিহীন লুটপাটের ঘটনার মূল হোতা হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে আমিনুর রহমানকে। এজন্য ব্যাংকটির পর্ষদে উপদেষ্টা হিসেবে আমিনুর রহমানের মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হলেও সেটি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে সাহস পায়নি ইউনিয়ন ব্যাংক।
২০০৮ সালের ২৮ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ২৭ জুলাই পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের এমডির দায়িত্বে ছিলেন এস এম আমিনুর রহমান। তার মেয়াদেই লুটপাটের শিকার হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। এ সময়ে জনতা ব্যাংকে সংগঠিত হয়েছে বিসমিল্লাহ গ্রুপ, এননটেক্স, ক্রিসেন্ট গ্রুপের মতো দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক কেলেঙ্কারি ও লুটপাটের ঘটনা। জনতা ব্যাংক থেকে বিদায় নিয়েই ইউনিয়ন ব্যাংকের উপদেষ্টা পদে যোগ দিয়েছিলেন আমিনুর রহমান। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত মেয়াদ ছিল তার। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আমিনুর রহমানকে আবারও উপদেষ্টা পদে নিয়োগের প্রস্তাব পাস করে ইউনিয়ন ব্যাংকের পর্ষদ। কিন্তু ওই সময়ই রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের এননটেক্স ও ক্রিসেন্ট কেলেঙ্কারির বিষয়টি সামনে আসে। ওই কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে গণমাধ্যমে উঠে আসে আমিনুর রহমানের নাম। এজন্য তাকে ব্যাংকটির উপদেষ্টা পদে আবারও নিয়োগ দিতে মৌখিকভাবে অস্বীকৃতি জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে এখানে নিয়োগের আবেদন জানাতেই সাহস করেনি নতুন প্রজšে§র ব্যাংকটি। অথচ চাকরি না থাকলেও এখনও ইউনিয়ন ব্যাংকে নিয়মিত অফিস করছেন আমিনুর রহমান।
এ প্রসঙ্গে আমিনুর রহমানকে প্রশ্ন করা হলে গতকাল শনিবার ভোরের পাতাকে বলেন, ‘আমি জানিনা আমি বলে এসেছি; আবেদনও করিনি। আপনি নিয়মিত ইউনিয়ন ব্যাংকে অফিস করছেন কি-না, আরেক প্রশ্নের জবাব জানতে চাইলে তখন তিনি বলেন, এক কথায় তিনি উত্তর দেন ‘না না না’ আমি অফিস করছি না। কয়েকদিন কাগজ গোছানোর জন্য গিয়েছিলাম; আমি সবকিছু (অফিস কক্ষ ও গাড়ি) স্যারেন্ডার করেছি। তিনি হেসে হেসে আরও বলেন, এটা এমডির পদ নয়; উপদেষ্টা হিসেবে ছিলাম। আসলে অফিসে সবাইকে বলে এসেছি, আমি কোনো আবেদন করিনি। যদি কখনও যাইও তাহলে সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে যাব বলে জানান।’
তবে আমিনুর রহমানের অফিস করার বিষয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক লোপাটের সঙ্গে আমিনুর রহমানের নাম আলোচিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে একটি নতুন প্রজšে§র ব্যাংকে তার উপদেষ্টা পদে থাকার কোনো কারণ থাকতে পারে না। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মৌখিকভাবে তার মেয়াদ বাড়ানো হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। চাকরি না থাকা সত্ত্বেও আমিনুর রহমান ইউনিয়ন ব্যাংকে অফিস করলে, সেটি অপরাধ বলে গণ্য হবে।
প্রসঙ্গত, বিসমিল্লাহ গ্রুপের কেলেঙ্কারিতে ২০১২ সালে ভিত নড়ে গিয়েছিল জনতা ব্যাংকের। চলতি বছরের শুরুতে ঝড় উঠেছিল এননটেক্স গ্রুপের সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি নিয়ে। তারপর উদঘাটিত হলো ব্যাংকটির ক্রিসেন্ট ও রিমেক্স ফুটওয়্যারের ৪ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি। এর বাইরেও গত এক দশকে ছোট-বড় নানা জালিয়াতির ঘটনায় বিপর্যস্ত হয়েছে জনগণের অর্থে পরিচালিত ব্যাংকটি। লাগামহীন লুটপাটের কারণে বেসিক ব্যাংকের মতোই ডুবতে বসেছে জনতা ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির লুটপাট শুরু হয়েছিল সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এম আমিনুর রহমানের হাত ধরে। ২০০৮ সালের ২৮ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ২৭ জুলাই পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের এমডির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ১৪ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। নতুন করে খেলাপির ঝুঁকিতে আছে আরও কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাবেক এমডি এস এম আমিনুর রহমানের অপকীর্তিই জনতা ব্যাংককে ডুবিয়েছে। তার সময়ে বিতরণ করা ঋণ খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। বিসমিল্লাহ গ্রুপ, এননটেক্স, ক্রিসেন্টসহ জনতা ব্যাংকের সব বৃহৎ ঋণ কেলেঙ্কারি আমিনুর রহমানের হাতে সংঘটিত হয়েছে। টানা ৭ বছর ব্যাংকটির শীর্ষ নির্বাহীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি। আর এ সময়টিতেই ব্যাংকটির অন্ধকার যুগের সূচনা করেছে। এস এম আমিনুর রহমানই হলেন জনতা ব্যাংক লুটের ‘মাস্টারমাইন্ড’।