শপথ নিতে চান মনসুর-মোকাব্বির, গণফোরামের না

- ২৮-জানুয়ারী-২০১৯ ১০:৪৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচিত গণফোরামের দুই সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান সংসদে শপথ নিতে ইচ্ছুক। অপরদিকে ঐক্যফ্রন্ট বলছে, জোটটি গঠিত হয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য। তাদের মতে, যেহেতু এটি হয়নি তাই ঐক্যফ্রন্টের কোনো নেতা শপথ নিতে পারেন না।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণে রেকর্ড সংখ্যক আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। এদিকে বিএনপি, গণফোরামসহ আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দল জোটবদ্ধ হয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নামে নির্বাচনে আসলে তাদের ভরাডুবি হয়। জোটটি আসন পায় মাত্র আটটি। ভোটের পর অন্য দলের এমপিরা শপথ নিলেও শপথ নেয়নি ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। এ নিয়ে জোটে সৃষ্টি হয়েছে মত পার্থক্যের।
এ বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচিত গণফোরাম নেতা সুলতান মো. মনসুর আহমেদ জানিয়েছেন, শপথের বিষয়ে আমি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করি। হয়তো শপথ নেব। কারণ আমি আমার নির্বাচনী আসনের ভোটারদের অসম্মান করতে পারি না।
এদিকে, সোমবার সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে গণফোরাম জানিয়েছে, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খানসহ ঐক্যফ্রন্টের কোনো সদস্য শপথ নেবেন না। এ বিষয়ে আগের সিদ্ধান্তই বহাল আছে।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। এ জোটের ঐক্য সুদৃঢ় ও অটুট আছে বলেও উল্লেখ করেন।
কিন্তু জানা গেছে, আওয়ামী লীগে ফিরছেন মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে জয়ী ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সুলতান মো. মনসুর আহমেদ। যেকোন দিন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ঘরে ফেরা’র ঘোষণা দিতে পারেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, সুলতান মনসুর আওয়ামী লীগে ফিরছেন। পুরনো ঘরে ফিরে শিগগিরই রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন তিনি। আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের প্যানেলকে বিজয়ী করতে সাবেক এ ভিপিকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। এ বিষয়ে সুলতান মনসুরও মত প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একজন সদস্য জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় গণভবনে গিয়েছিলেন সুলতান মো. মনুসর আহমেদ। সাক্ষাতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন।
তিনি আরো জানান, ডাকসু নির্বাচনে সুলতান মনসুরসহ সাবেক দুই নেতাকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত শনিবার দলের একটি সভা শেষে ডাকসু নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠে আসে। এ সময় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেন, ওরা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে নামবে। আমরাও আখতারুজ্জামান ও সুলতান মোহাম্মদ মনসুরকে নামাব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ২০০৯ সালের সম্মেলনে বাদ পড়েন দলীয় পদ থেকে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য দলে এ অবস্থা হয় তার। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়।
অন্যদিকে, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করায় জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সুলতান মনসুর এমপি হিসেবে শপথ নিলে বিএনপি তার সদস্য পদ বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিলে তার সদস্য পদ থাকবে না।
সে অনুযায়ী, দল ও জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এমপি হিসেবে শপথ নিলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও সিলেট-২ আসন থেকে গণফোরামের দলীয় প্রতীক ‘উদীয়মান সূর্য’ নিয়ে নির্বাচিত মোকাব্বির খানকে।
সরকার গঠনের পর গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রথম ভাষণে বিভেদ ভুলে ‘জাতীয় ঐক্যের’ আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংখ্যায় ‘কম হলেও’ বিএনপির নির্বাচিতদের শপথ নিয়ে সংসদে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের প্রস্তাব ও সমালোচনার ‘যথাযথ মূল্যায়ন’ করা হবে।
কিন্তু ওই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ মুহূর্তে সংসদে যাওয়ার বা শপথ নেয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না।
আগামী ৩০ জানুয়ারি একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে। অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারি থেকে একাদশ সংসদের যাত্রা শুরু হবে। নিয়ম অনুযায়ী, তার পরের ৯০ দিনের মধ্যে কেউ শপথ নিয়ে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর না করলে তার আসন শূন্য ঘোষণা করে সেখানে উপ-নির্বাচন দেয়া হবে।